জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সাড়ম্বরে পালন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রাজধানী ঢাকা। এই মাহেন্দ্রক্ষণ উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হযেছে, যার মধ্যে অন্যতম জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিও-ভিজুয়াল প্রদর্শনীসহ বিশেষ পরিবেশনা। ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১৭ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে নানামুখী এসব অনুষ্ঠান। উল্লেখ্য, গত বছর করোনা মহামারীর তীব্রতার কারণে মুজিব শতবর্ষ তেমন আড়ম্বর আয়োজনে উদযাপিত হতে পারেনি। স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ জনসাধারণকে সুরক্ষা দিতে সরকারকে অনুষ্ঠানমালা সীমিত ও কাটছাঁট করতে হয়েছে। দেশব্যাপী করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হলেও সম্প্রতি সংক্রমণ ও মৃত্যুঝুঁকি কমতে থাকায় মূল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির তালিকা পাঁচ শ’ জনে সীমিত রাখা হয়েছে, যাতে রয়েছে করোনা পরীক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা। তবে সব অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। সব কিছু ছাপিয়ে যা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে তা হলো বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকায় আসছেন অন্তত পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ। তারা বিভিন্ন দিনে বিভিন্ন সময় উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে। এর বাইরেও অডিও-ভিডিও বার্তা দেবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জেন পিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুুডো, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চুং স্যু কুয়েন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা, ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ আল-ওথাইমিন, ইউনিসেফের মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা, ভ্যাটিকানের পোপ ফ্রান্সিস প্রমুখ। বিভিন্ন দিনের জন্য বিভিন্ন থিম নির্ধারণ হলেও ২৬ মার্চের থিম হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা। এদিন উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উল্লেখ্য, এ সময় বাংলাদেশ ও ভারতের অকৃত্রিম মৈত্রী ও সখ্যের পঞ্চাশ বছরও পূরণ হবে। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে শুধু অকুণ্ঠ সমর্থনই দেয়নি, বরং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণসহ অবারিত সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সপক্ষে গড়ে তুলেছিল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জনমত ও স্বীকৃতির সোপান। সে সময়ে বাংলাদেশের অন্তত এক কোটি শরণার্থী বর্বর পাকসেনাদের অত্যাচার-নির্যাতনসহ গণহত্যার কারণে পালিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন ভারতে। সে অবস্থায় দু’দেশের অকৃত্রিম সুদৃঢ় বন্ধনের দিকটি চিরস্মরণীয় এবং বরণীয় অবশ্যই। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই বলছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরটি হবে শুধু উদযাপনের। দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান অমীমাংসিত বিষয়গুলো এবার উত্থাপনসহ আলোচনায় না আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এত কিছুর বাইরেও যেটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও আশাব্যঞ্জক দিক তা হলো, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, যার স্বীকৃতি জাতিসংঘ দিয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে অবশ্য এটি কার্যকর হবে ২০২৬ থেকে। ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার সব ক’টি শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে এই বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতেই পারি। জয় হোক বাংলাদেশের। জয় হোক দেশ ও জাতির।
Leave a Reply